মঙ্গলবার, ২৬ নভেম্বর ২০২৪, ০৩:৪৮ পূর্বাহ্ন
বরগুনা প্রতিনিধি॥ পায়রা, বিষখালী ও বলেশ্বর নদীর অব্যাহত ভাঙন, ঘূর্ণিঝড় আম্ফান ও সম্প্রতি অধিক উচ্চতার জোয়ারে তোড়ে বরগুনার প্রায় ৩০ কিলোমিটার বন্যা নিয়ন্ত্রণ বাঁধ নদীগর্ভে বিলীন হওয়ার উপক্রম হয়েছে। এসব ভাঙা বেড়িবাঁধ দিয়ে পানি ঢুকে প্লাবিত হচ্ছে ভাঙন কবলিত এলাকা।
ভাঙন কবলিতদের অভিযোগ, বর্ষা মৌসুম এলেই বাঁধ নির্মাণ শুরু হয়। এতে বাঁধ টেকসই হয় না, শুকনো মৌসুমে টেকসই ও স্থায়ী বাঁধ নির্মাণের দাবি জানান তারা।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, ঘূর্ণিঝড় আম্ফানে জেলার বিভিন্ন এলাকার বাঁধ ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। এর মধ্যে বরগুনা সদর উপজেলায় ৪১/২ থেকে ৪১/৬বি পোল্ডারের পূর্ব আমতলী, ফুলঢলুয়া, কাকড়াবুনিয়া, সাজিমারা, নলী, কাঠালতলী, ছোটবালিয়াতলী, আঙ্গারপাড়া, ডৌয়াতলা, গলাচিপা, গুলিশাখালী, পূর্ব পাতাকাটা, ফুলঝুড়িতে ৬.১ কিলোমিটার। পাথরঘাটা উপজেলায় ৩৯/১ থেকে ৪০/১ পোল্ডারের পরীঘাটা ছোনবুনিয়া, কালমেঘা, ঘুটাবাছা, দক্ষিণ কুপধন, কাকচিড়া, চরলাঠিমারা, রুহিতা, জিনতলা, পদ্মা, হাজিরখাল এলাকায় ৫.৪৬ কিলোমিটার। বামনা উপজেলায় ৩৯/১ডি পোল্ডার থেকে ৩২/এ, কড়ইতলা, রামনা, অযোদ্ধা, পূর্ব সফিপুর, কালিকাবাড়ি, চেচাং, বুকাবুনিয়া, বড় তালেশ্বর, পূর্ব বলইবুনিয়া, পশ্চিম বলইবুনিয়া এলাকায় ৩.৯৮৬ কিলোমিটার। বেতাগী উপজেলায় ৪১/৭ এ পোল্ডার এবং ৪১/৭বি পোল্ডারে বকুলতলী, কুমড়াখালী, পশ্চিম কাউনিয়া, ছোট বদরখালী ৩৭০ মিটার। আমতলী উপজেলায় ৪১/১ থেকে ৫৪/বি পোল্ডারে ঘটখালী, কুকুয়া, পূর্বচিলা, শাখারিয়া, আঠারোগাছিয়া, সোনাখালী বুধবারেরহাট ১.৩৩ কিলোমিটার। তালতলী উপজেলায় ৪৪/বি এবং ৪৫ পোল্ডার থেকে নিউপাড়া, জয়ালভাঙ্গায় ১.৮ কিলোমিটার বাঁধ তিন নদীর অব্যাহত ভাঙনে বিলীনের মুখে রয়েছে। এছাড়া সম্পূর্ণ বিলীন হওয়া ৩৬০ মিটার বাঁধ নির্মাণ করা হয়েছে।
আগস্টে অধিক উচ্চতায় জোয়ার প্রবাহিত হওয়ায় প্রায় ৯ কিলোমিটার বাঁধ ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। এর মধ্যে বরগুনা সদর উপজেলায় তিনটি স্থানে ৫.৪৫ কিলোমিটার। পাথরঘাটা উপজেলার কালমেঘা, ছোনবুনিয়া এলাকায় ১.২৬৩ কিলোমিটার, বামনা উপজেলায় অযোধ্য, কালিকাবাড়ী এলাকায় ৪৩৬ মিটার, তালতলী উপজেলায় ১.২১০ কিলোমিটার এবং বেতাগী উপজেলার বুড়ামজুমদার এলাকায় ২০ মিটার বাঁধ জোয়ারে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। যেকোনো সময় এসব বাঁধ ভেঙে নদীতে বিলীন হওয়ার আশঙ্কা করছে স্থানীয়রা।
বরগুনা পানি উন্নয়ন বোর্ড জানিয়েছে, জেলার ২২টি পোল্ডারে ৯০৫ কিলোমিটার বাঁধের মধ্যে ঘূণিঝড় আম্ফানে ২১ কিলোমিটার ও সাম্প্রতিক জোয়ারে প্রায় ৯ কিলোমিটার বাঁধ ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। এছাড়া প্রায় ৩০ কিলোটিার বাঁধ নদীভাঙনের মুখে পড়েছে। এসব বাঁধ সংস্কারের জন্য তিনটি প্রকল্পের মাধ্যমে অর্থ বরাদ্দ চেয়ে মন্ত্রণালয়ে আবেদন করা হয়েছে। বরাদ্ধ পেলেই জরুরি ভিত্তিতে সংস্কার কাজ শুরু হবে।
বলেশ্বর নদের তীরবর্তী গুলিশাখালী গ্রামের বাসিন্দা খাইরুল আলম স্বপন বলেন, ঝড়-জলোচ্ছ্বাসের সময় কর্তৃপক্ষের টনক নড়ে। ঝড় থেমে গেলে তাদের আর খবর থাকে না। নির্মাণ কাজে নিম্নমানের উপকরণ ব্যবহার করায় এসব বাঁধ দীর্ঘস্থায়ী হয় না।
তালতলী উপজেলার জয়ালভাঙা গ্রামের বাসিন্দা আকলিমা বেগম বলেন, বাঁধের ভাঙা অংশ দিয়ে জোয়ার পানি ঢুকে ঘর-বাড়ি ও ফসল তলিয়ে যায়। কোনো সবজি চাষ করতে পারি না।
তেতুলবাড়িয়ার বাসিন্দা শাহাদাত হোসেন বলেন, ঘূর্ণিঝড় সিডরে আমাদের এই এলাকার বাঁধ নদীতে বিলীন হওয়ার পর থেকে এখন পযন্ত কোনো স্থায়ী বাঁধ নির্মাণ হয়নি। প্রতি বছর ঝড়-জলোচ্ছ্বাসে আমাদের বাড়ি ঘর, ফসলি জমি নদীতে বিলীন হয়ে যায়।
পানি উন্নয়ন বোর্ড বরগুনা কার্যালয়ের নির্বাহী প্রকৌশলী কায়সার আলম বলেন, বঙ্গোপসাগরে সৃষ্ট লঘুচাপ, বৃষ্টি ও অমাবস্যার প্রভাবে উপকূলের নদ-নদীতে অস্বাভাবিক জোয়ারে বরগুনার পাঁচটি উপজেলার প্রায় ৯ কিলোমিটার বাঁধ ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। এছাড়া ঘূর্ণিঝড় আম্ফানে আরো ২১ কিলোমিটার বাঁধ হুমকির মুখে পড়েছে। এসব বাঁধ সংস্কার ও পুণরায় নির্মাণের জন্য অর্থ মন্ত্রণালয়ে চিঠি দিয়েছি। অনুমোদন ও বরাদ্দ পেলেই কাজ শুরু হবে।
Leave a Reply